বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১১

বাংলাদেশ :গণতন্ত্র উত্তরণের উপায়,নতুন প্রজন্মের ভাবনা

বৃহস্পতি, ১১ অগাষ্টu-এ ২০১১, ২৭ শ্রাবণ ১৪১৮
ছবি ও অনুলিখন ঃ তামিম মজিদ

গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে সংসদ কার্যকর করার বিকল্প নেই
মহানাম ভট্টাচার্য মিঠুন
৩য় বষর্, ২য় সেমিস্টার,
সমাজকর্ম বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে প্রথমেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা বাড়াতে হবে। রাজনীবিদরাই পারেন গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে।  কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা নেই। দেশের রাজনীতি এখন পরিবারতান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। গঠনতন্ত্রে  গণতান্ত্রিক দল হলেও দুই প্রধানদল পরিবারতান্ত্রিক দলে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক এক দলের নেতা অপর দলের নেতাকে সহ্য করতে পারেন না। এই কাদা  ছোঁড়াছুঁড়ির রাজনীতি পরিহার করতে হবে। বড় দুটি দলের যাঁতাকলে গণতন্ত্র আজ পিষ্ট। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সকল রাজনৈতিক দলকে একযোগে কাজ করতে হবে। পৃথিবীর বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশের মত আমাদের দেশেও দলের নেতা নির্বাচন ভোটের মাধ্যমে করতে হবে। পরিবারতন্ত্র ও হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতির অবসান ঘটানো প্রয়োজন। দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সরকারের উচিত বিরোধীদল ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনা করা। আর গণতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সংসদকে কার্যকর করা।  যে কোন সমস্যা সংসদে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করা প্রয়োজন। গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে সংসদ কার্যকর করার বিকল্প নেই।

সংকীর্ণ মনোভাব পরিহার করলে গণতন্ত্রের পথ উত্তরণে সহায়ক হবে
কাজী রাকিন
৪র্থ বর্ষ, ২য় সেমিস্টার,
ব্যবসা প্রশাসন বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
শত ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও এখনও প্রকৃত স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। একটি স্বাধীন ভূখন্ড, নিজস্ব ভাষা ও সাহিত্য আর লাল-সবুজের পতাকা পেলেও  দীর্ঘ  ৩৯ বছর পেরিয়ে দেশ পরাধীনতার শেকলে আবদ্ধ হয়ে আছে,পারেনি বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে আজও। বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়  চরমভাবে কলুষিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের সর্বোচ্চ সংবিধান, শিক্ষাব্যবস্থা, আইনবিভাগ, নির্বাহী বিভাগ তথা আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ, প্রশাসন এমনকি প্রতিরক্ষা বিভাগ বিভিন্ন দলীয় ও ক্ষমতাবান শাসকগোষ্ঠীর  প্রভাব ও শক্তিতে প্রতিষ্ঠিত ও আনুগত্যশীল। রাজনৈতিক  দলগুলো ও নেতৃবৃন্দের  দেশপ্রেম বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তারা পরস্পর হিংসা , মারামারি আর কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত। তাই একটি দেশের গণতন্ত্র উত্তরণের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন  নিখাদ দেশপ্রেমিক ও  সচেতনতা ।
আমার মতে, দেশপ্রেমের মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দক্ষ ও মহান মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারলেই গণতান্ত্রিক রূপ পেতে পারে। তাছাড়া চাটুকারী রাজনীতি পরিহার করে পারস্পরিক ভাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে  জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের  মাটি ও মানুষের অগ্রগতির প্রচেষ্টা চালাতে হবে । শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন করে ধর্মীয় বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করে দেয়া উচিত। এতে ধার্মিক ও নৈতিকতাসম্পন্ন দেশপ্রেমিক নাগরিক হয়ে রুখতে পারবে দুর্নীতি, উত্তরণ করবে আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা। সুষ্ঠ ও নিরেপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা  ও সাহিত্য শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সর্বোপরি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে  উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক স্বাধীন ব্যবস্থা, গণতন্ত্র চর্চা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, মানবিক অধিকার ও নিরাপত্তা সংরক্ষণ, পরনির্ভশীলতা, মানবিক বৈকল্য, সংকীর্ণ মনোভাব  পরিহার করলে গণতন্ত্রের পথ উত্তরণে  সহায়ক হবে।

দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে ওঠে রাজনীতিবিদের জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে
দীপান্নিতা বাড়ৈ
৩য় বষর্, ২য় সেমিস্টার,
অর্থনীতি বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন ‘Democracy  is for the people, of the people and lon the people’ কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপেটে গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করা যায়, ‘Democracy is for few people, of few people and by few people’। স্বাধীনতার দীর্ঘদিনেও আমরা গণতন্ত্রের স্বাদ পাইনি। আমরা আমাদের দেশের গণতন্ত্র মূলত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দিন দিন  ভেঙ্গে পড়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিদ্বেষ মূলত এই অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা তৈরি করতে হবে। রাজনীতিকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার না করে সমগ্র জাতির কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর বিরোধী দলকে নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে না বলে সরকারী দলকে স্বাগত জানাতে হবে। বিরোধীদল সরকারকে সাহায্য করতে হবে দেশের অগ্রগতির জন্য। দেশের জনগণকেও সচেতন হতে হবে তাদের অধিকার সম্পর্কে। সর্্বোপরি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে বিচার বিভাগসহ প্রত্যেক সরকারী প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন করতে হবে। রাষ্র্বপতিকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে ওঠে সমগ্র জাতিকে নিয়ে ভাবতে হবে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধীদের ক্ষমা বন্ধ করতে হবে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে ওঠে রাজনীতিবিদের জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক সংগঠনকে গণতান্ত্রিকমনস্ক হতে হবে। বিভিন্ন ইস্যুতে  সরকারের একক ক্ষমতাবলে আইন পাস না  করে বিরোধীদলের মতামত নিয়ে আইন ও নীতিমালা  প্রণয়ন করা জরুরী। তাহলেই আমরা গণতন্ত্রকে শক্তীশালী হিসেবে দেখতে পাব।  

দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত ও স্বাধীন করতে হবে
মৌসুমী কপালি
৩য় বষর্, ২য় সেমিস্টার,
রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

গণতন্ত্র চর্চা হয় না বলেই আমাদের দেশের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। রাষ্ট্রীয় নাম ‘Peoples Republic of Bangladesh’ হলেও কাজে পরিবারতান্ত্রিক বাংলাদেশ। রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। জাতিকে বিভক্ত না করে  ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিককে এক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থীতিশীলতা। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের দেখে মনে হয় রাজনৈতিক অস্থীতিশীলতা গণতন্ত্রের পূর্বশত। এই অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত ও স্বাধীন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে স্বচ্ছতা, ক্ষমতার স্বাতন্ত্র্যীকরণ নীতি প্রণয়ন, সরকারের প্রতিটি বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতে হবে। সরকারকে জনগণের ইচ্ছার প্রাধান্য দিতে হবে। জনপ্রতিনিধি হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরী। তাহলেই অশিক্ষিত ও  অযোগ্যরা জনপ্রতিনিধি হতে পারবে না। অযোগ্য নেতৃত্ব বন্ধ হলে গণতন্ত্রের সুফল পাওয়া যাবে।

‘রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকই সমান’ এই চিন্তা মাথায় রাখতে হবে
আতিক মাহবুব
৩য় বর্ষ ২য় সেমিষ্টার,
সমাজকর্ম বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট।

আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সাথে আছে ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক চেতনা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের রয়েছে নিজস্ব স্বাতন্ত্র। সেই হিসেবে আমাদের চেতনা ও মন মগজে মুক্তিযুদ্ধ এখনও চিরউজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধে আবাগহন। যার কারণে এই দেশে অতীতে বিভিন্ন সময়ে বেনিয়ারা আমাদের চেতনাকে ধ্বংস করার পায়তারা করেছিল। কিন্তু এই জাতি সেইসব বিদেশী প্রভুদের শক্ত জবাব দিয়েছিল। মুক্তবুদ্ধি চর্চা ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা না হলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। সামপ্রতিককালে আমাদের রাজনীতিতে মুক্তবুদ্ধি চর্চা  ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। মিডিয়া দলন, স্বৈরচারতন্ত্র, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাসহ  রাষ্ট্রকে সর্বক্ষেত্রে দলীয় করণে সুষ্ঠ গণতন্ত্র কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে দেশের রাজনৈতিক চালচিত্রে ক্রমশ পটপরিবর্তন হচ্ছে। জনগণের আশা আশঙ্খার প্রতি বর্তমান সরকার যেন ভ্রক্ষেপ করছে না।
জণগণের সাথে কৃত ওয়াদা ভুলে গিয়ে সরকার যে ধারার সৃষ্টি করতে চাইছে তা কখনো রাষ্ট্রে কাম্য হতে পারে না। তাই আমার মতে,বালাদেশকে একটি আধুনিক ডিজিটাল স্বদেশ হিসেবে গড়তে হলে সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রে জনগণের কাম্য বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত নীতি সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। আাামাদের শিক্ষা ব্যবস্থা,ব্যবসা বাণিজ্যেসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র  লালনে আজীবন বিভাজন রয়ে যাবে। তরুণ প্রজন্মদের সামনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আরো সক্রিয়ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। দেশের ধারক এবং বাহক হিসেবে তাদেরকে আগামী দিনের জন্য আরো যোগ্য ও খাটি দেশপ্রেমিক হিসেবে  গড়তে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এখনই জরুরী। পাশাপাশি সকল ক্ষেত্রে আইনের সুষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হব। ‘রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকই সমান’ এই চিন্তা মাথায় রাষ্ট্র দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে থেকে জনগণের জন্য সরকার এই অবলম্বন নিশ্চিত করতে হবে।
http://new.ittefaq.com.bd/news/view/34705/2011-08-11/19

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন