ছবি ও অনুলিখন :তামিম মজিদ
বুধ, ১৭ অগাষ্টu-এ ২০১১, ২ ভাদ্র ১৪১৮
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হলেই কেবল এ শর্ত পূরণ হতে পারে
মায়ীশা হক
১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষের লড়াই অনেক দিনের পুরনো। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকেই শুরু হয়েছে এ অধিকার আদায়ের লড়াই, এখনো সেটি চলছে। যদিও মাঝে বছর দু’য়েকের একটি বিরতি বাদ দিলে বিগত দুই দশক ধরে অন্তত কাগজে-কলমে হলেও গণতান্ত্রিক শাসনই চলছে বাংলাদেশে, কিন্তু সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে এ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে আরো। কিন্তু কী ভাবে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আগে খুঁজতে হবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় ধরনের হলেও এখানে প্রধান দুটি দলের দুই নেত্রীর হাতে ক্ষমতা এমনভাবে কেন্দ্রীভূত যে তাঁরা নির্বাচিত হলেও প্রায় একনায়কতান্ত্রিকভাবেই সরকার পরিচালনা করে থাকেন। এ ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের সংগঠন পরিচালনায় গণতান্ত্রিক রীতির প্রচলন। আশার কথা, নির্বাচনী সংস্কারের পথ ধরে খুব ধীরে ধীরে হলেও সে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে। গণতন্ত্র কেবলই সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন নয়, সংখ্যালঘুর মতামতকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এ প্রক্রিয়ার সাফল্যের অন্যতম শর্ত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হলেই কেবল এ শর্ত পূরণ হতে পারে।
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গণতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য অনুসারে কাজ করতে হবে
জাবের আল ওসমানী
১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র একটি আলোচিত বিষয়। গণতন্ত্র যুগ-যুগ ধরে রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তা জগতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে আসছে। গণতন্ত্রকে আদর্শ ভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শত শতাব্দী ধরে সভ্য মানব জাতি সংগ্রাম করে আসছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে গণতন্ত্র একটি প্রাচীনতম ধারণা। কিন্তু সামপ্রতিক কালে গণতন্ত্র নবীন ও জনগণের প্রত্যাশিত শাসন ব্যবস্থা। বর্তমান আধুনিক যুগ গণতান্ত্রিক যুগ। গ্রিক দার্শনিক পেরিক্লিস গ্রীক নগর রাষ্ট্র এথেন্সকে আদর্শ গণতন্ত্র বলে উল্লেখ করেন। পেরিক্লিস মূলত আইনের শাসন ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারী কর্মচারী নিয়োগ করাকেই গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে মনে করতেন। সাধারণ ভাবে গণতন্ত্র বলতে এমন এক ধরনের শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায়, যেখানে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেদেরকে শাসন করে। জন স্টুয়ার্ট মিলের মতে গণতান্ত্রিক জনগণ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, আইনের শাসন, ব্যাপক শিক্ষা ব্যবস্থা, জনগণের আস্থা অর্জন, অর্থনৈতিক সাম্য, সামাজিক সাম্য, ক্ষমতার বিকেন্দ্রকরণ, উপযুক্ত নেতৃত্ব, সহনশীলতা, মুক্ত ও স্বাধীন প্রচার , যোগ্য নেতৃত্ব, সুষ্ঠু দলীয় ব্যবস্থা, উন্নত চরিত্র ও নৈতিকতা, সচেতনতা, মুক্ত আলোচনা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গণতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য অনুসারে কাজ করতে হবে। এছাড়া বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের উপর সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। তাহলেই আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র অনেকটা শক্তিশালী হিসেবে দেখতে পারব।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যকার মতৈক্য দূর করতে হবে
শিরিন সুলতানা
মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
আমরা বহুকাল থেকে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে আসছি। কিন্তু আমরা কখনো গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখতে পাইনি। এর মূলে রয়েছে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব, স্বদেশ প্রেমের অভাব, অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া, দুর্নীতির গ্রাস, আমলাতন্ত্রে রাজনৈতিক প্রমোশন, স্বজনপ্রীতি ও আমাদের দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। শিক্ষিত রাজনীতিবিদদের অভাব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ স্বাধীন হলেও আমরা গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারিনি। আমাদের রাজনীতি পরিবারতান্ত্রিক। কাগজে-কলমে বড় দুই রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক সংগঠন। কিন্তু তাদের কাজ-কর্ম স্বৈরতান্ত্রিক মনে হয়। গণতন্ত্র উত্তরণ করতে হলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যকার মতৈক্য দূর করতে হবে। জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির উর্ধ্বে উঠে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। সর্বোপরি প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের কর্মী ও জনগণ গণতন্ত্র মনস্ক হতে হবে। পৃথিবীর উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অনুসরণ করে দেশ চালাতে বিভিন্ন পলিসি গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই আমরা প্রকৃত গণতন্ত্র পেতে পারি।
শিক্ষার সকল শাখায় গণতন্ত্র বিষয়ে নির্দিষ্ট সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে
মাজহারুল হক সরকার
৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার, অর্থনীতি বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
বাঙ্গালী জাতি গণতন্ত্রমনা। তাই অনেক আগে থেকেই গণতন্ত্রের জন্য সংগাম করে আসছে। ৫২ সালে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। ৭১ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লোক জীবন দিয়েছে। স্বাধীর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু আমরা আদৌ কী স্বাধীন ? আমাদের রাষ্ট্রে কী আদৌ গণতন্ত্র আছে ? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। আমাদের দেশের সর্বক্ষেত্রে চরম দলীয়করণ আর স্বজনপ্রীতি । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে। কথা বলার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সরকারের সমালোচনা করলে পুলিশ এসল্ট মামলা দেয়া হয়। গ্রেফতার করে রাজনীতিবিদসহ বিরোধী মতের সবাইকে নির্যাতন করা হয়। বিনা অপরাধে বছরের পর বছর জেল খাটতে হয় নিরীহ রাজনীতিবিদদের। আন্দোলন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। অধিকার আদায়ে জনগণ আন্দোলন করবেই। এটা গণতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু প্রত্যেক সরকারগুলো জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাঁধা দেয়। রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নৈতিকতা সম্পন্ন জনগণ গড়ে তুলতে হবে। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। শিক্ষার সকল শাখায় গণতন্ত্র বিষয়ে নির্দিষ্ট সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। সমাজে অন্যায় অবিচার বন্ধ করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি হস্তক্ষেপ মুক্ত করা প্রয়োজন। সবাইকে স্বদেশ প্রেমে বলীয়ান হয়ে অগণতান্ত্রিক কাজ বর্জন করে সুন্দর ন্যায় ও গণতান্ত্রিক কাজ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।
দলমত নির্বিশেষে যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে
শিমুল দত্ত
মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
গণতন্ত্র বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সর্বোত্কৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা। প্রকৃত গণতন্ত্র ধারণ করতে পারলে দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রে এখন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু আছে। উন্নত দেশগুলো গণতন্ত্রের আদর্শ ধরে রাখতে পারছে বলেই তারা উন্নত জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এ জন্য আমাদের সমাজে এত অশান্তি আর রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। গণতন্ত্রের সুফল পেতে হলে আমাদের রাজনীতিবিদ ও জনগণকে সচেতন হতে হবে। সরকারকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে হবে। অযোগ্য ব্যক্তিদের প্রশাসনে পদোন্নতি বন্ধ করতে হবে। দলীয় ভাবে না দেখে মেধাবীদের পদোন্নতি দিতে হবে। প্রশাসনিক কার্যাবলির বিকেন্দ্রকরণ ঘটাতে হবে। আমলাদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। সর্বোপরি দলমত নির্বিশেষে যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে যিনি নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন। সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবেন। তাহলেই আমরা গণতান্ত্রিক সোনার বাংলাদেশ গঠন করতে পারব।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করতে হবে
সাজিদুল ইসলাম সবুজ
৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
পরাধীনতার শৃংখল হতে নিজেদের মুক্ত করতে ও স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছিল। গণতন্ত্রান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। স্বাধীনতার ৪০ বছরেও আমরা গণতন্ত্রের স্বাদ পাইনি। আমাদের রাজনীতিবিদরা গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছেন? নাকি জনগণ করেছে? আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতার মূল কারণ, প্রত্যেক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। নির্বাচন কমিশন, সংসদ, দুদক, বিচার বিভাগসহ এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকে না। এই সংস্কৃতি থেকে প্রত্যেক সরকার বা রাজনৈতিক দলকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র উত্তোরণের জন্য প্রথমেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করতে হবে। যেমন, নির্বাচন কমিশন, সংসদ, দুদক, বিচার বিভাগ প্রভৃতি। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলসমূহের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার অভাব রয়েছে্ । সুষ্ঠুু গণতন্ত্রের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকা অত্যাবশ্যক। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তা না থাকলে তারা ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করতে পারবে না। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব, শক্তিশালী ছায়া সরকার গঠন, কার্যকর কমিটি ব্যবস্থা, কার্যকর সংসদ ও সর্বোপরি সরকার ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক মানসিক বিকাশ ঘটাতে হবে।
http://new.ittefaq.com.bd/news/view/35993/2011-08-17/19
বুধ, ১৭ অগাষ্টu-এ ২০১১, ২ ভাদ্র ১৪১৮
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হলেই কেবল এ শর্ত পূরণ হতে পারে
মায়ীশা হক
১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষের লড়াই অনেক দিনের পুরনো। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকেই শুরু হয়েছে এ অধিকার আদায়ের লড়াই, এখনো সেটি চলছে। যদিও মাঝে বছর দু’য়েকের একটি বিরতি বাদ দিলে বিগত দুই দশক ধরে অন্তত কাগজে-কলমে হলেও গণতান্ত্রিক শাসনই চলছে বাংলাদেশে, কিন্তু সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে এ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে আরো। কিন্তু কী ভাবে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আগে খুঁজতে হবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় ধরনের হলেও এখানে প্রধান দুটি দলের দুই নেত্রীর হাতে ক্ষমতা এমনভাবে কেন্দ্রীভূত যে তাঁরা নির্বাচিত হলেও প্রায় একনায়কতান্ত্রিকভাবেই সরকার পরিচালনা করে থাকেন। এ ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের সংগঠন পরিচালনায় গণতান্ত্রিক রীতির প্রচলন। আশার কথা, নির্বাচনী সংস্কারের পথ ধরে খুব ধীরে ধীরে হলেও সে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে। গণতন্ত্র কেবলই সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন নয়, সংখ্যালঘুর মতামতকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এ প্রক্রিয়ার সাফল্যের অন্যতম শর্ত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হলেই কেবল এ শর্ত পূরণ হতে পারে।
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গণতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য অনুসারে কাজ করতে হবে
জাবের আল ওসমানী
১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র একটি আলোচিত বিষয়। গণতন্ত্র যুগ-যুগ ধরে রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তা জগতে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে আসছে। গণতন্ত্রকে আদর্শ ভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শত শতাব্দী ধরে সভ্য মানব জাতি সংগ্রাম করে আসছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে গণতন্ত্র একটি প্রাচীনতম ধারণা। কিন্তু সামপ্রতিক কালে গণতন্ত্র নবীন ও জনগণের প্রত্যাশিত শাসন ব্যবস্থা। বর্তমান আধুনিক যুগ গণতান্ত্রিক যুগ। গ্রিক দার্শনিক পেরিক্লিস গ্রীক নগর রাষ্ট্র এথেন্সকে আদর্শ গণতন্ত্র বলে উল্লেখ করেন। পেরিক্লিস মূলত আইনের শাসন ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারী কর্মচারী নিয়োগ করাকেই গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে মনে করতেন। সাধারণ ভাবে গণতন্ত্র বলতে এমন এক ধরনের শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায়, যেখানে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেদেরকে শাসন করে। জন স্টুয়ার্ট মিলের মতে গণতান্ত্রিক জনগণ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য, আইনের শাসন, ব্যাপক শিক্ষা ব্যবস্থা, জনগণের আস্থা অর্জন, অর্থনৈতিক সাম্য, সামাজিক সাম্য, ক্ষমতার বিকেন্দ্রকরণ, উপযুক্ত নেতৃত্ব, সহনশীলতা, মুক্ত ও স্বাধীন প্রচার , যোগ্য নেতৃত্ব, সুষ্ঠু দলীয় ব্যবস্থা, উন্নত চরিত্র ও নৈতিকতা, সচেতনতা, মুক্ত আলোচনা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গণতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য অনুসারে কাজ করতে হবে। এছাড়া বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের উপর সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। তাহলেই আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র অনেকটা শক্তিশালী হিসেবে দেখতে পারব।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যকার মতৈক্য দূর করতে হবে
শিরিন সুলতানা
মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
আমরা বহুকাল থেকে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে আসছি। কিন্তু আমরা কখনো গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখতে পাইনি। এর মূলে রয়েছে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব, স্বদেশ প্রেমের অভাব, অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া, দুর্নীতির গ্রাস, আমলাতন্ত্রে রাজনৈতিক প্রমোশন, স্বজনপ্রীতি ও আমাদের দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। শিক্ষিত রাজনীতিবিদদের অভাব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ স্বাধীন হলেও আমরা গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারিনি। আমাদের রাজনীতি পরিবারতান্ত্রিক। কাগজে-কলমে বড় দুই রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক সংগঠন। কিন্তু তাদের কাজ-কর্ম স্বৈরতান্ত্রিক মনে হয়। গণতন্ত্র উত্তরণ করতে হলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যকার মতৈক্য দূর করতে হবে। জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির উর্ধ্বে উঠে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। সর্বোপরি প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের কর্মী ও জনগণ গণতন্ত্র মনস্ক হতে হবে। পৃথিবীর উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অনুসরণ করে দেশ চালাতে বিভিন্ন পলিসি গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই আমরা প্রকৃত গণতন্ত্র পেতে পারি।
শিক্ষার সকল শাখায় গণতন্ত্র বিষয়ে নির্দিষ্ট সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে
মাজহারুল হক সরকার
৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার, অর্থনীতি বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
বাঙ্গালী জাতি গণতন্ত্রমনা। তাই অনেক আগে থেকেই গণতন্ত্রের জন্য সংগাম করে আসছে। ৫২ সালে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। ৭১ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লোক জীবন দিয়েছে। স্বাধীর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু আমরা আদৌ কী স্বাধীন ? আমাদের রাষ্ট্রে কী আদৌ গণতন্ত্র আছে ? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। আমাদের দেশের সর্বক্ষেত্রে চরম দলীয়করণ আর স্বজনপ্রীতি । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে। কথা বলার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সরকারের সমালোচনা করলে পুলিশ এসল্ট মামলা দেয়া হয়। গ্রেফতার করে রাজনীতিবিদসহ বিরোধী মতের সবাইকে নির্যাতন করা হয়। বিনা অপরাধে বছরের পর বছর জেল খাটতে হয় নিরীহ রাজনীতিবিদদের। আন্দোলন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। অধিকার আদায়ে জনগণ আন্দোলন করবেই। এটা গণতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু প্রত্যেক সরকারগুলো জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাঁধা দেয়। রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নৈতিকতা সম্পন্ন জনগণ গড়ে তুলতে হবে। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। শিক্ষার সকল শাখায় গণতন্ত্র বিষয়ে নির্দিষ্ট সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। সমাজে অন্যায় অবিচার বন্ধ করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি হস্তক্ষেপ মুক্ত করা প্রয়োজন। সবাইকে স্বদেশ প্রেমে বলীয়ান হয়ে অগণতান্ত্রিক কাজ বর্জন করে সুন্দর ন্যায় ও গণতান্ত্রিক কাজ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।
দলমত নির্বিশেষে যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে
শিমুল দত্ত
মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
গণতন্ত্র বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সর্বোত্কৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা। প্রকৃত গণতন্ত্র ধারণ করতে পারলে দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রে এখন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু আছে। উন্নত দেশগুলো গণতন্ত্রের আদর্শ ধরে রাখতে পারছে বলেই তারা উন্নত জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এ জন্য আমাদের সমাজে এত অশান্তি আর রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। গণতন্ত্রের সুফল পেতে হলে আমাদের রাজনীতিবিদ ও জনগণকে সচেতন হতে হবে। সরকারকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে হবে। অযোগ্য ব্যক্তিদের প্রশাসনে পদোন্নতি বন্ধ করতে হবে। দলীয় ভাবে না দেখে মেধাবীদের পদোন্নতি দিতে হবে। প্রশাসনিক কার্যাবলির বিকেন্দ্রকরণ ঘটাতে হবে। আমলাদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। সর্বোপরি দলমত নির্বিশেষে যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে যিনি নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন। সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবেন। তাহলেই আমরা গণতান্ত্রিক সোনার বাংলাদেশ গঠন করতে পারব।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করতে হবে
সাজিদুল ইসলাম সবুজ
৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
পরাধীনতার শৃংখল হতে নিজেদের মুক্ত করতে ও স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছিল। গণতন্ত্রান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। স্বাধীনতার ৪০ বছরেও আমরা গণতন্ত্রের স্বাদ পাইনি। আমাদের রাজনীতিবিদরা গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছেন? নাকি জনগণ করেছে? আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতার মূল কারণ, প্রত্যেক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। নির্বাচন কমিশন, সংসদ, দুদক, বিচার বিভাগসহ এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকে না। এই সংস্কৃতি থেকে প্রত্যেক সরকার বা রাজনৈতিক দলকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র উত্তোরণের জন্য প্রথমেই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করতে হবে। যেমন, নির্বাচন কমিশন, সংসদ, দুদক, বিচার বিভাগ প্রভৃতি। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলসমূহের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার অভাব রয়েছে্ । সুষ্ঠুু গণতন্ত্রের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকা অত্যাবশ্যক। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তা না থাকলে তারা ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করতে পারবে না। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব, শক্তিশালী ছায়া সরকার গঠন, কার্যকর কমিটি ব্যবস্থা, কার্যকর সংসদ ও সর্বোপরি সরকার ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক মানসিক বিকাশ ঘটাতে হবে।
http://new.ittefaq.com.bd/news/view/35993/2011-08-17/19
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন