শনি, ৩০ জুলাই ২০১১, ১৫ শ্রাবণ ১৪১৮
সরকারের উচিত ছিল ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করা
রাকিন আল নিদাল
৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেশকে নিশ্চিত সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়। সরকারের নির্দেশেই নির্বাচন কমিশন কাজ করে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এই তত্ত্বাবধায়ক আওয়ামী লীগই আন্দোলন করে এনেছিল্ । এখন আবার সুবিধা বুঝে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আর সংবিধানে একসাথে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র কিভাবে চলে ? সংবিধানে এক সাথে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতা সাংঘর্ষিক। এটা জনগণকে ধোঁকা দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। যেহেতু সংবিধান সংশোধনীতে জনগণের মতামত নেওয়া হয়নি তাই এটি জনগণের সংবিধান নয়, আওয়ামী লীগের দলীয় সংবিধানে পরিণত হয়েছে। সরকারের উচিত ঐকমত্যের গণভোটের মাধ্যমে ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করা । তাহলেই কেবল সংবিধান সংশোধন গ্রহণযোগ্য হবে।
দ্বিমুখী নীতির কারণে সংবিধান সংশোধনীর কোন সুফল পাওয়া যাবে না
মিজানুর রহমান,
৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
সমপ্রতি সরকার পঞ্চম সংশোধনীর বিল পাস করেছেন, এই সংশোধনী নিয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে। সংবিধানে জিয়াউর রহমান ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করায় তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ কথা বলে আসছিল। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সত্ত্বেও পঞ্চদশ সংশোধনীতে জনগণের সেন্টিমেন্টের কথা বলে এখন সেই বিসমিল্লাহ বহাল রেখেছে। এটি জাতির সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। বর্তমান সংবিধান সংশোধনীর কয়েকটি ধারা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করা হয়েছে, আবার একই সাথে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ বহাল রাখা হয়েছে। এই ধারা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস না থাকলে এই সংবিধান দিয়ে কি হবে। আর ধর্মনিরপেক্ষতা রাখলে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করা উচিত ছিল্ । সরকারকে যে কোন একটি বিষয় রাখতে হবে। এই দ্বিমুখী নীতি জাতির সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত নিজেই বলেছেন এই সংবিধান সংশোধন দিয়ে তারা কাউকেই খুশি করতে পারলেন না। প্রকৃতপক্ষে সংবিধান সংশোধন করে কাকে খুশি করতে চায় এটি জাতির কাছে স্পষ্ট করতে হবে। এই দ্বিমুখী নীতির কারণে সংবিধান সংশোধনীর কোন সুফল পাওয়া যাবে না।
সংবিধান সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে
মারিয়া সুলতানা মৌরি
৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার, লোক প্রশাসন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
বর্তমান সংবিধান সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। পঞ্চাদশ সংশোধনী অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়তে সাহায্য করবে। সংবিধানের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহলের অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা ও টিকে থাকবার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। পৃিথবীর বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু নেই। আমরা যদি গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করি তবে আমাদেরকেও একই পথে হাঁটতে হবে। যেমন ভারত, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য হল পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব। কিন্তু সত্যিকারের গণতান্ত্রিক স্বাদ পেতে হলে এই শুরুটা অবশ্যই করতে হবে যে, পূর্বের সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুটি লাভ হবে। এক. নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, জাতীয়ভাবে সকলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা হবে, যা কোন সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আবশ্যিক। দুই. ৭২-এর সংবিধান পুনর্বহালের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুরোপুরি পুনর্বহাল, যা অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রেরণা যোগাবে। এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
৭২-এর সংবিধান ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা গঠন করা সম্ভব
প্রিয়াংকা
৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার,
রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
বর্তমান সংবিধান সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। যা আমাদেরকে অন্যায় শোষণ, শাসন, নির্যাতন ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রেরণা যোগাবে। অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে সাহায্য করবে। আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হলে ৭২-এর মূল সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ব। ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন করা সম্ভব হবে।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা পুরোপুরি পুনর্বহাল হয়েছে
মো: নাজমুস সাকিব তানভীর
এল.এল.বি অনার্স (৯ম সেমিস্টার)
অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হয়েছে। সংবিধানের কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেছে। যে ইস্যুগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন শুরু করেছে সেগুলো হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং বিসমিল্লাহ্-এর ব্যবহার। এখানে প্রধান বিরোধী দলের দাবি হল-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেন থাকে, ইসলামিক দলগুলোর দাবি মনে হচ্ছে বিসমিল্লাহ্-এর ব্যবহার প্রসঙ্গে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এখন বাংলাদেশের জন্য খারাপ। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কারণে ১/১১ এর মত সংকটময় অবস্থায় পড়তে হয়েছিল এই দেশকে। এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ওপর কারো বিশ্বাস নেই। যেখানে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষভাবে গড়তে পারলে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দরকার হয় না। হরতাল করে মানুষ ও দেশের ক্ষতি না করে সব রাজনৈতিক দল আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট সমাধান করতে পারে।
আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির ইস্যু আগে থেকে উঠলেও তা জোরালো হয় সংক্ষিপ্ত রায়ের পরে। পরবর্তী দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধনের সময়ে রায়ের একটি দিক আমলে নিয়ে সংবিধান সংশোধন করেছে। ৭২-এর সংবিধান পুনর্বহালের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুরোপুরি পুনর্বহাল হয়েছে যা আমাদেরকে সকল প্রকার অন্যায়, শোষণ-শাসন, নির্যাতন ও অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে প্রেরণা যোগাবে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনুচ্ছেদ ১২ কে পুনঃস্থাপিত করার সাথে সাথে অনুচ্ছেদ ২ ক-তে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহিম পূর্বের অবস্থায় বহাল রাখা হয়েছে। যদিও বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহিম-এর বঙ্গানুবাদে পরম সৃষ্টিকর্তার নামে শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। আমাদের দেশে সমস্যা হল-সাম্প্রদায়িক, অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, প্রগতিশীল সকলকে সন্তুষ্ট রাখা। সকল মানুষের মধ্যে সংবিধান প্রসঙ্গে সচেতনতা গড়ে তোলা উচিত।
জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান
সংশোধন হওয়া উচিত ছিল
সুমাইয়া ইয়াছমিন (সুবর্ণা)
৭ম সেমিস্টার (এল.এল.বি অনার্স)
অতীশ দিপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা
ধর্মনিরপেক্ষতা, আর রাষ্ট্রধর্ম একসাথে রাখা হয়েছে; কিন্তু কেন। আমরা যদি তাকাই সংবিধানের ২৮ নং অনুচ্ছেদে। সেখানে বলা হয়েছে পারস্পরিক কোন বিরোধিতা কোন বিষয়ে থাকবে না। সরকারের এদিকে একটু লক্ষ্য করা উচিত। তার চিন্তা থাকবে একটাই-মানব ধর্মই রাষ্ট্রের ধর্ম, মানব কল্যাণই রাষ্ট্রের কল্যাণ।
এ বছর (২০১১) সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে। সেইসঙ্গে আরো দুই মেয়াদ এই ব্যবস্থা বহাল রাখা যেতে পারে বলে মত দেন। এটিকে পুঁজি করে সরকার যে সংশোধনী আনে তাতে পূর্বের সংবিধানের মূলনীতি থেকে শুরু করে ৪৮টি সংশোধনী হয় যাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণ কল্যাণ ভোগ করবে। সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে উপজাতীয়দের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে; কিন্তু অনেক উপজাতি এতে সন্তুষ্ট নয়। তারা জাতির স্বীকৃতি চায় অর্থাত্ আদিবাসী হিসাবে। তাই আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে দাবি করতে পারি সংশোধনী অবশ্যই হবে। তবে দুই দলের মতামতের ওপর ভিত্তি করে এবং জনগণের মতামতকে সবার আগে প্রাধান্য দিয়ে।
অনুলিখন: তামিম মজিদ
http://new.ittefaq.com.bd/news/view/31963/2011-07-30/19
সরকারের উচিত ছিল ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করা
রাকিন আল নিদাল
৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেশকে নিশ্চিত সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়। সরকারের নির্দেশেই নির্বাচন কমিশন কাজ করে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এই তত্ত্বাবধায়ক আওয়ামী লীগই আন্দোলন করে এনেছিল্ । এখন আবার সুবিধা বুঝে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। আর সংবিধানে একসাথে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র কিভাবে চলে ? সংবিধানে এক সাথে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতা সাংঘর্ষিক। এটা জনগণকে ধোঁকা দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। যেহেতু সংবিধান সংশোধনীতে জনগণের মতামত নেওয়া হয়নি তাই এটি জনগণের সংবিধান নয়, আওয়ামী লীগের দলীয় সংবিধানে পরিণত হয়েছে। সরকারের উচিত ঐকমত্যের গণভোটের মাধ্যমে ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করা । তাহলেই কেবল সংবিধান সংশোধন গ্রহণযোগ্য হবে।
দ্বিমুখী নীতির কারণে সংবিধান সংশোধনীর কোন সুফল পাওয়া যাবে না
মিজানুর রহমান,
৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টার, রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
সমপ্রতি সরকার পঞ্চম সংশোধনীর বিল পাস করেছেন, এই সংশোধনী নিয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে। সংবিধানে জিয়াউর রহমান ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করায় তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ কথা বলে আসছিল। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সত্ত্বেও পঞ্চদশ সংশোধনীতে জনগণের সেন্টিমেন্টের কথা বলে এখন সেই বিসমিল্লাহ বহাল রেখেছে। এটি জাতির সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। বর্তমান সংবিধান সংশোধনীর কয়েকটি ধারা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করা হয়েছে, আবার একই সাথে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ বহাল রাখা হয়েছে। এই ধারা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস না থাকলে এই সংবিধান দিয়ে কি হবে। আর ধর্মনিরপেক্ষতা রাখলে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করা উচিত ছিল্ । সরকারকে যে কোন একটি বিষয় রাখতে হবে। এই দ্বিমুখী নীতি জাতির সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত নিজেই বলেছেন এই সংবিধান সংশোধন দিয়ে তারা কাউকেই খুশি করতে পারলেন না। প্রকৃতপক্ষে সংবিধান সংশোধন করে কাকে খুশি করতে চায় এটি জাতির কাছে স্পষ্ট করতে হবে। এই দ্বিমুখী নীতির কারণে সংবিধান সংশোধনীর কোন সুফল পাওয়া যাবে না।
সংবিধান সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে
মারিয়া সুলতানা মৌরি
৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার, লোক প্রশাসন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
বর্তমান সংবিধান সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। পঞ্চাদশ সংশোধনী অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়তে সাহায্য করবে। সংবিধানের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহলের অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা ও টিকে থাকবার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। পৃিথবীর বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু নেই। আমরা যদি গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করি তবে আমাদেরকেও একই পথে হাঁটতে হবে। যেমন ভারত, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য হল পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব। কিন্তু সত্যিকারের গণতান্ত্রিক স্বাদ পেতে হলে এই শুরুটা অবশ্যই করতে হবে যে, পূর্বের সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুটি লাভ হবে। এক. নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, জাতীয়ভাবে সকলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা হবে, যা কোন সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আবশ্যিক। দুই. ৭২-এর সংবিধান পুনর্বহালের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুরোপুরি পুনর্বহাল, যা অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রেরণা যোগাবে। এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
৭২-এর সংবিধান ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা গঠন করা সম্ভব
প্রিয়াংকা
৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার,
রাজনীতিবিদ্যা বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
বর্তমান সংবিধান সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। যা আমাদেরকে অন্যায় শোষণ, শাসন, নির্যাতন ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রেরণা যোগাবে। অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে সাহায্য করবে। আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হলে ৭২-এর মূল সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ব। ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন করা সম্ভব হবে।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা পুরোপুরি পুনর্বহাল হয়েছে
মো: নাজমুস সাকিব তানভীর
এল.এল.বি অনার্স (৯ম সেমিস্টার)
অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ হয়েছে। সংবিধানের কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেছে। যে ইস্যুগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন শুরু করেছে সেগুলো হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং বিসমিল্লাহ্-এর ব্যবহার। এখানে প্রধান বিরোধী দলের দাবি হল-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেন থাকে, ইসলামিক দলগুলোর দাবি মনে হচ্ছে বিসমিল্লাহ্-এর ব্যবহার প্রসঙ্গে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এখন বাংলাদেশের জন্য খারাপ। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কারণে ১/১১ এর মত সংকটময় অবস্থায় পড়তে হয়েছিল এই দেশকে। এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ওপর কারো বিশ্বাস নেই। যেখানে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষভাবে গড়তে পারলে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দরকার হয় না। হরতাল করে মানুষ ও দেশের ক্ষতি না করে সব রাজনৈতিক দল আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট সমাধান করতে পারে।
আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির ইস্যু আগে থেকে উঠলেও তা জোরালো হয় সংক্ষিপ্ত রায়ের পরে। পরবর্তী দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধনের সময়ে রায়ের একটি দিক আমলে নিয়ে সংবিধান সংশোধন করেছে। ৭২-এর সংবিধান পুনর্বহালের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুরোপুরি পুনর্বহাল হয়েছে যা আমাদেরকে সকল প্রকার অন্যায়, শোষণ-শাসন, নির্যাতন ও অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে প্রেরণা যোগাবে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনুচ্ছেদ ১২ কে পুনঃস্থাপিত করার সাথে সাথে অনুচ্ছেদ ২ ক-তে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহিম পূর্বের অবস্থায় বহাল রাখা হয়েছে। যদিও বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহিম-এর বঙ্গানুবাদে পরম সৃষ্টিকর্তার নামে শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। আমাদের দেশে সমস্যা হল-সাম্প্রদায়িক, অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, প্রগতিশীল সকলকে সন্তুষ্ট রাখা। সকল মানুষের মধ্যে সংবিধান প্রসঙ্গে সচেতনতা গড়ে তোলা উচিত।
জনগণের প্রয়োজনে সংবিধান
সংশোধন হওয়া উচিত ছিল
সুমাইয়া ইয়াছমিন (সুবর্ণা)
৭ম সেমিস্টার (এল.এল.বি অনার্স)
অতীশ দিপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা
ধর্মনিরপেক্ষতা, আর রাষ্ট্রধর্ম একসাথে রাখা হয়েছে; কিন্তু কেন। আমরা যদি তাকাই সংবিধানের ২৮ নং অনুচ্ছেদে। সেখানে বলা হয়েছে পারস্পরিক কোন বিরোধিতা কোন বিষয়ে থাকবে না। সরকারের এদিকে একটু লক্ষ্য করা উচিত। তার চিন্তা থাকবে একটাই-মানব ধর্মই রাষ্ট্রের ধর্ম, মানব কল্যাণই রাষ্ট্রের কল্যাণ।
এ বছর (২০১১) সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে। সেইসঙ্গে আরো দুই মেয়াদ এই ব্যবস্থা বহাল রাখা যেতে পারে বলে মত দেন। এটিকে পুঁজি করে সরকার যে সংশোধনী আনে তাতে পূর্বের সংবিধানের মূলনীতি থেকে শুরু করে ৪৮টি সংশোধনী হয় যাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণ কল্যাণ ভোগ করবে। সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে উপজাতীয়দের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে; কিন্তু অনেক উপজাতি এতে সন্তুষ্ট নয়। তারা জাতির স্বীকৃতি চায় অর্থাত্ আদিবাসী হিসাবে। তাই আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে দাবি করতে পারি সংশোধনী অবশ্যই হবে। তবে দুই দলের মতামতের ওপর ভিত্তি করে এবং জনগণের মতামতকে সবার আগে প্রাধান্য দিয়ে।
অনুলিখন: তামিম মজিদ
http://new.ittefaq.com.bd/news/view/31963/2011-07-30/19
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন